How much blessed i am!!

তিন হাজার স্কয়ার ফিটের নতুন ফ্ল্যাটটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন মামা । আমার পিছন পিছন হেঁটে হেঁটে একেক রুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইন আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছিলেন মামী । শেষে ড্রইংরুম বসে মামীকে বললাম ‘বাসাটা কত্ত সুন্দর ! জবাবে মামী বললেন ‘বাসাটা ছোট্ট, পাঁচ হাজার স্কয়ার হইলে ভাল হইতো, কিচেনের ডিজাইনটা মন মত হয় নাই ।’ এভাবে একটার পর অভাব বলেই চললো । বাসাটাতে আমার তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল । নীচে যখন নামলাম তখন লোড শেডিং, শহুরে অন্ধকারে পিচ ঢালা পথটা অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় । মানুষের অতৃপ্ত মন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল আমায় ‘অথচ এরকম একটা বাসা এ শহুরে কত মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে সাহস পায় না। বিশাল প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান স্যারের চেম্বারে বসে লম্বা মিটিং শেষে গল্প করছিলাম । স্যারই আমাদের ছাড়তে চাইছিলেন না । তার উঠে আসার গল্প বলতে গিয়ে কেমন ইমোশনাল হয়ে গেলেন । আজ এত কিছু পেয়েও তার বুক ভরা কষ্ট, এত্ত আদরের একমাত্র মেয়েটার সংসারটা ভেঙে গেছে । চার বছরের নাতী সহ মেয়েটা তার সাথেই থাকে। এত বেশী কষ্ট পেয়েছে, ওর আর বিয়েই করবে না । পাঁচ জনে ঠাসা পুরো রুমটা নিস্তব্ধ তখন । স্যারকে টিস্যু এগিয়ে দিতে গিয়ে কি মনে করে থেমে গেলাম। ধার দেনা করে ইলেকট্রনিক্সের ছোট্ট দোকানটা যখন দেয় তখন আসিফকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘মাস শেষে কত থাকলে খুশী । জবাবে ও বলেছিল ‘দুইটা ডাইল ভাত খায়া বাঁচতে পারলেই খুশী ।’ আসিফের এখন অনেক টাকা, কিন্তু ওর রিজিক থেকে ডাল ভাত উঠে গেছে । অনেকগুলো শোরুম তার, মাসের বেশীরভাগ সময় গুয়াংজো পরে থাকে। এমন অসংখ্য ঘটনা আমাদের আশেপাশেই। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেকটা মানুষকে অতৃপ্ত আর অসুবিধার মধ্যে রেখেছেন । পুরোপুরি তৃপ্ত , মনের কষ্ট বা বিপদ আপদ নাই- সারা দুনিয়ায় এমন একটা মানুষও নাই। আমাদের চক্ষু কত টুকুই বা দেখতে পায়! দুনিয়াকে সৃষ্টিকর্তা রেখেছেন সবচে নীচে । বাকী সব কিছু উপরে । আর সৃষ্টিকর্তা এটাকে ডিজাইন করেছেন অতৃপ্তি অশান্তি অভাব বিপদ আর অভিযোগ দিয়ে। সত্যিই তাই ! আপনি যদি মনে করেন আপনি সব পাবেন । তবে আপনি ভুল গ্রহে আছেন । এখানে কষ্টকর জিনিসটা আপনি হারাতে চাইবেন, সেটা হারিয়ে আবার পেতে চাইবেন । কি অদ্ভুত। যে মানুষটার সাথে দিন রাত ঝগড়া করেন, এক দিন সৃষ্টিকর্তা তাঁকে উঠিয়ে নেন । আর তখনই বোধোদয় হয়, ঝগড়াটাই ভাল ছিল । অন্তত কথা বলার কেউ তো ছিল। অত বড় বড় অট্টালিকার ভেতরের কতটুকুই কষ্টই বা আমরা দেখতে পাই । মাঝ রাতে নেশা করে ঘরে ফেরা ছেলেটাকে দরজা খুলে দেয়া বাবার কষ্ট কয়জনে জানে । অথচ আমরা শুধু দামী জুতো আর মার্সিডিজটাই দেখতে পাই । আমরা জানি সব কষ্ট শুধু অভাবেই; বিত্তের ভিতরের অভাবটা আরও ভয়াবহ । তার মানে দিন শেষে সবাই কোন না কোন ভাবে অভাবী । এটাই দুনিয়া আর অভাব না থাকলে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যেতো। চোখের পানিতে সৃষ্টিকর্তা এমন কিছু দিয়েছেন যেটা বের হলে মানুষ শান্তি পায় । এটা আমার কথা না , আধুনিক বিজ্ঞান তাই বলছে । আর একারণেই খুব কষ্ঠে চোখের পানিটা বের হওয়ার পর মনটা একটু শান্ত হয়। প্রত্যেকটা মানুষই কোন না কোন ভাবে অসুখী । দুনিয়াতে সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষাটা এমনি ।আর সৃষ্টিকর্তার কাছে কাঁদতে পারা মানুষগুলোই বেশী সুখী। সমস্যাটা বলে একটু কেঁদে আসুন। যে কাঁদতে পারে শুধু সেই জানে এই সুখটা কত মধুর।

Comments

Popular posts from this blog

Facts about being actuary !

জমির খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি?

How to Run C and C++ Program in Sublime Text