বাংলাদেশ_কে_কি_ধ্বংসের_মুখে_ফেলে_দিবে_পরমাণু_বিদ্যুৎকেন্দ্র?

#বাংলাদেশ_কে_কি_ধ্বংসের_মুখে_ফেলে_দিবে_পরমাণু_বিদ্যুৎকেন্দ্র?
রুপপুরে নির্মাণ চলছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। যদিও আমাদের প্রথম নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর সাভারে। সাভারের রিয়্যাক্টরটি মাত্র ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার যেটা শুধু মাত্র রিসার্চ রিয়্যাক্টর হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এদিকে রুপপুরের রিয়্যাক্টর দুটি ১২০০+১২০০ মোট ২৪০০ মেগাওয়াট এর। একেকটি রিয়্যাক্টর এর থারমাল পাওয়ার (তাপ শক্তি) ক্ষমতা ৩৬০০ মেগাওয়াটের। তাপশক্তি ক্ষমতা যা তার তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সেই হিসাবে ৩৬০০ মেগাওয়াট এর ৩ ভাগের এক ভাগ ১২০০ মেগাওয়াট হচ্ছে একেকটি রিয়্যাক্টরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা।

#বাংলাদেশের_অধিকাংশ_মানুষ_পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম শুনলেই ভয়ে পারমাণবিক বোমার কথা মনে করে গুলিয়ে ফেলে। তাদের ধারনা যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তবে পুরা উপজেলা শুদ্ধ উড়ে যাবে। মূলত সেসব মানুষের জন্য আজকের এই পোস্ট। অল্প সল্প রিসার্চ করে পোস্ট টি করা। তাই ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন।
শুরুতেই পারমাণবিক বোমা আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পার্থক্য তুলে ধরি। পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে ইউরেনিয়াম কে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সমৃদ্ধ করতে হয়। সাধারণত বোমা বানাতে গেলে ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট ৯০%+ হতে হয়।
অপরদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়াম খুব কম সমৃদ্ধ করা হয়। সাধারণত এটি ২.৫% থেকে ৫.৫% এর সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এত কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কখনোই কোন বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম নয়। তাই উপজেলা শুদ্ধ বিস্ফরণে উড়ে যাবে যারা বলছেন তারা ভুল।

#বিস্ফরিত_হবার_ক্ষমতা_না_থাকলেও যে ঝুকি রয়ে যায় সেটি হল রেডিয়েশন এর ঝুকি। আর এরুপ রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ে যদি কোন মেল্টডাউন হয়। মানে উৎপন্ন তাপ শক্তি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। সেক্ষেত্রে ঠান্ডা করার জন্য কুলিং সিস্টেম রয়েছে। কোন কারনে কুলিং সিস্টেম কাজ না করলে এরকম মেল্টডাউন হতে পারে।
ধরা যাক রুপপুরে মেল্টডাউন হল। এরকম ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কিছুটা কঠিন। সাধারণত যেকোন ইন্ডাস্ট্রি সেটা যত উন্নত এবং সুরক্ষিত হোক না কেন দূর্ঘটনা ঘটবেই। যে দূর্ঘটনা ১০০০০ বছরে একবার হবার মত সম্ভাবনা আছে, তার মানে এই না যে আজ সেরকম কোন দূর্ঘটনা হবে না। হতে পারে আজ এই সময়েই সেটি হচ্ছে।

#আমেরিকা_যখন_কোন_পারমাণবিক_প্লান্ট করে তখন ১৮০০ এর শতকে ঘটে যাওয়া সোলার ফ্লেয়ারের কথাও মাথায় রাখে। মহাজাগতিক নিয়ম অনুযায়ী সূর্য হতে বিপুল পরিমান শক্তি তীব্র বেগে ধেয়ে যায় চার পাশে। এটিই সোলার ফ্লেয়ার। আর এরকম ক্ষেত্রে এটা ইএমপি এর মত কাজ করে যেকোন বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা অকার্যকর করে দিতে সক্ষম। যেহেতু কুলিং সিস্টেম পরিচালনা করার জন্য ভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন হয়। তাই এরকম পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে কুলিং সিস্টেম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে ঘটতে পারে জাপানের ফুকুশিমার মত দূর্ঘটনা। আর ভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ এনে কুলিং সিস্টেম পরিচালনা করার কাজকে এক্টিভ সিকিউরিটি মেজারস বলে।
এখন আসি আরেকটি বিষয়ে। প্রতিটা দূর্ঘটনা যেমন ভীষণ বিপদ ডেকে আনে ঠিক তেমনি প্রতিটি দূর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই মানুষ আরো নিরাপদ উপায় উদ্ভাবন করে। ফুকুশিমার রিয়্যাক্টর ছিল পুরাতন মডেলের। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও ছিল না। এমনকি রাশিয়ার ভিভিই আর-১০০০ মডেলের রিয়্যাক্টর গুলিতেও অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে যদিও এটি বিশ্বের বহুল ব্যাবহৃত রিয়্যাক্টর।

#বাংলাদেশে_রাশিয়া_যে_রিয়্যাক্টর ব্যাবহার করছে সেটি ভিভিই আর-১২০০ মডেলের। এই মডেলে সর্বশেষ ফুকুশিমার যে দূর্বলতা ছিল সেগুলিকে কাটিয়ে তুলা হয়েছে। এখানে এক্টিভ নিরাপত্তা ব্যাবস্থার দূর্বলতার কথা মাথায় রেখে প্যাসিভ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ব্যাবহার যুক্ত করা হয়েছে। যদি কোন কারনে কুলিং সিস্টেম ব্যার্থ হয় তবে বিদ্যুৎ এর সংযোগ ছাড়ায় এই ব্যাবস্থা রেডিয়েশন নিয়ন্ত্রন করবে এবং ঠান্ডা করবে। এর জন্য প্রচলিত স্প্রিং, পিস্টনের মত ব্যাবস্থা যুক্ত হয়েছে যেগুলাতে কোন বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন পড়বে না।
যদি কখনো এমন হয় যে নিউক্লিয়ার মেল্টডাউন হয়েছে সেক্ষেত্রে রিয়্যাক্টর এর কোর গলে যায়। ভয়াবহ রেডিয়েশন ছড়ায় এরকম ক্ষেত্রে। ফুকুসিমা তে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কোর ক্যাচার যুক্ত করা হয়েছে। যদি কখনো কোর গলে যায় তবে সেটি কোর ক্যাচার আটকে ফেলবে। ফলে বাইরে রেডিয়েশন লিকেজ হবে না৷ সেই সাথে দুইটা কম্পার্টমেন্ট এর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে।
#কম্পার্টমেন_গুলি এমন ভাবে নির্মাণ করা হবে যেটা প্রায় ১.২ মিটার মোটা কংক্রিট। এই কংক্রিটের ভেতরে আবার ৬ মিলি মিটার পুরু লোহার আস্তরন। এই একটা কম্পার্টমেন্ট এর উপর কিছু দুরত্বে অনুরুপ আরেকটি কম্পার্টমেন্ট করা হবে।
টোটাল ব্যাবস্থাটা এমন যে যদি কোন বিমান টুইন টাওয়ার এর মত এসে আঘাত করে সেটিকে প্রতিহত করে টিকে থাকবে এই ব্যাবস্থা। সেখানে সাধারন  মিসাইলের আঘাত সামান্যই ক্ষতি করতে পারবে।
আর এর নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ও থাকবে।
এত কিছুর পর আমাদের তবুও ভাবতে হবে। জাপানের ক্ষেত্রে পাওয়ার প্লান্টের ৩০ কিমি রেডিয়াস পর্যন্ত ইভ্যাকুয়েশন করা হয়েছে। এমন না যে এর ভেতরে যারা থাকবে সবাই মারা যাবে। সতর্কতা হিসাবেই এটা করা হয়। উক্ত অঞ্চলের উৎপাদিত সকল ফসল নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও জাপানিজ রিয়াক্টর থেকে আমাদের টা অনেক বেশি উন্নত এবং নতুন প্রজন্মের। জাপানের ফুকুশিমার দূর্ঘটনার পেছনে দায়ী ছিল সুনামির পানি ফ্যাসিলিটিকে প্লাবিত করে দেয়। ফলে সব সিস্টেম অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমাদের ক্ষেত্রে রুপপুরে এরকম সুনামীর ঝুকি নেই। কারন সমুদ্র থেকে অনেক দূরে এর অবস্থান।

#পারমাণবিক_বিদ্যুৎকেন্দ্রের_অনেক_সুবিধা রয়েছে। জ্বালানি হিসাবে ইউরেনিয়াম একবার দেয়া হলে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অন্যদিকে কয়লা ভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট এর প্লান্টে আমাদের দৈনিক প্রায় ১০,০০০ টন কয়লা পোড়াতে হবে। সেই হিসাবে বছরে ৩৬,৫০,০০০ টন কয়লা লাগবে। আর ১০ বছরে ৩,৬৫,০০,০০০ টন বা তিন কোটি পয়ষট্টি লক্ষ টনের মত। চিন্তা করুন এর পরিবেশের উপর প্রভাব কত বেশি। কয়লা আমদানি করা, জাহাজ থেকে খালাস করা, পোড়ানো সব মিলিয়ে এটা খুব নোংরা একটা মাধ্যম। যদিও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাথমিক খরচ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু নিয়মিত জ্বালানি সরবরাহ এর কথা চিন্তা করলে এর খরচ কম না। এক্ষেত্রে প্রাথমিক খরচ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে বেশি হলেও ৬০ বছর আয়ুস্কালে ফিক্সড কস্ট ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায়। সেই সাথে পরিবেশের জন্য ও এর প্রভাব খুব সীমিত।
আরো অনেক কিছু লেখার ছিল। সময়ের অভাবে লিখতে পারলাম না। তবে বাংলাদেশ আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ করতে যাচ্ছে। এর জন্য দক্ষিণাঞ্চলে জমি খুজা হচ্ছে। ইপিযেড বা ইমারজেন্সি প্লানিং জোন নিয়েও বলার ইচ্ছে ছিল। অন্য কোন পোস্টে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।

Comments

Popular posts from this blog

Facts about being actuary !

জমির খতিয়ান কি কত প্রকার ও কি কি?

How to Run C and C++ Program in Sublime Text